পাশাপাশি স্থাপিত দুটি কনডাকটরের মধ্যবর্তী স্থানে ইনসুলেটর পদার্থ রেখে তড়িৎ আধানরূপে শক্তি সঞ্চয় করে রাখার যান্ত্রিক কৌশলকে ক্যাপাসিটর বলে। কোন উৎস যেমন ব্যাটারি থেকে ক্যাপাসিটরে শক্তি সঞ্চয় করে পুনরায় তা ব্যবহার করা হয়। লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যান মুসচেন ব্রোয়েক 1746 খ্রিস্টাব্দে চার্জ সঞ্চয় করার এই যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার করেন।
ডাই-ইলেকট্রিক
দুটি কনডাকটরের মধ্যবর্তী স্থানে কোন ইনসুলেটর পদার্থ যেমন- বায়ু , কাচ ,প্লাস্টিক ইত্যাদি স্থাপন করে ক্যাপাসিটর তৈরি করা হয়। এর মাঝের ইনসুলেটর পদার্থ ডাই-ইলেকট্রিক।
কোন কনডাকটরের বিভব প্রতি একক বাড়াতে যে পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হয় তা ঐ পরিবাহকের ক্যাপাসিটেন্স। ক্যাপাসিটেন্সকে C দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এর একক ফ্যারাড(F)।
এক ফ্যারাড অনেক বড়, প্রায় 6,280,000,000,000,000,000 ইলেকট্রনের সমান। তাই ব্যাবহারীক ক্ষেত্রে মাইক্রো ফ্যারাড (uF) এবং পিকো ফ্যারাড (pF) ব্যাবহার করা হয়। এক মাইক্রো ফ্যারাড সমান 0.000,001 ফ্যারাড এবং এক পিকো ফ্যারাড সমান 0.000,000,000,001 ফ্যারাড।
কোন কনডাকটরের ভোল্টেজ V পরিমান বাড়াতে যদি Q পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হয় তবে, ভোল্টেজ (V) একক পরিমাণ বাড়াতে Q/V পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হবে। $$ C = \frac{Q}{V} $$
এক ফ্যারাড
কোন পরিবাহকের বিভব এক ভোল্ট (1V) বাড়াতে যদি এক কুলম্ব (1C) আধানের প্রয়োজন হয়, তাহলে ঐ পরিবাহকের ক্যাপাসিটেন্সকে এক ফ্যারাড (1F) বলে।
একটি ক্যাপাসিটর যখন চার্জিত হয় তখন কনডাকটরদ্বয়ের মধ্যে একটি ইলেকট্রিক ফিল্ড উদ্ভব হয়। ইলেকট্রিক ফিল্ডে অবস্থিত যে কোন চার্জিত বস্তুর উপর ক্ষেত্রটি বল প্রয়োগ করে। ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত বস্তুর উপর এই বল ক্যাপাসিটরের ধনাত্মক পাতের দিকে ক্রিয়াশীল হয়। কনডাকটরদ্বয়ের মধ্যবর্তী ইনসুলেটর পদার্থ এই ইলেকট্রিক ফিল্ডের দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এই পদার্থে অবস্থিত চার্জিত কণাসমূহ (যেমন ইলেকট্রন) এই বলের প্রভাবে কনডাকটরের পজেটিভ পাতের দিকে সরে আসতে বাধ্য হয়। ফলে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রনের কক্ষপথ খানিকটা প্রসারিত হয়। ইলেকট্রনের কক্ষপথ বড় হয়ে যাওয়ার কারণে ইলেকট্রনের শক্তিস্তরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আর এইভাবে ক্যাপাসিটর এনার্জি সঞ্চয় করে।
ক্যাপাসিটরের প্লেট গুলোর মাঝে যখন পটেনশিয়াল পার্থক্য থাকে তখন ক্যাপাসিটরটি চার্জড এবং যখন পটেনশিয়াল পার্থক্য থাকে না তখন ডিসচার্জড।
ক্যাপাসিটরের প্রকারভেদ:
- ফিক্সড ক্যাপাসিটর (Fixed Capacitor)
- পেপার ক্যাপাসিটর (Paper Capacitor)
- প্লাস্টিক ফিল্ম ক্যাপাসিটর (Plastic Film Capacitor)
- পলি কার্বনেট ক্যাপাসিটর (Poly Carbonate Capacitor)
- মাইকা ক্যাপাসিটর (Mica Capacitor)
- সিরামিক ক্যাপাসিটর (Ceramic Capacitor)
- পলিয়েস্টার ক্যাপাসিটর (Polyester Capacitor)
- স্ট্রিলোফ্লেক্স ক্যাপাসিটর (Striloflex Capacitor)
- ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর (Electrolytic Capacitor)
- ট্যানটেলাম ক্যাপাসিটর (Tantalum Capacitor)
- ভ্যারিয়েবল ক্যাপাসিটর (Variable Capacitor)
- ট্রিমার ভ্যারিয়েবল ক্যাপাসিটর (Trimmer Variable Capacitor)
- প্যাডার ভ্যারিয়েবল ক্যাপাসিটর (Padder Variable Capacitor)
- গ্যাং ভ্যারিয়েবল ক্যাপাসিটর (Gang Variable Capacitor)
- পোলারিটি অনুসারেঃ
- পোলারাইজড ক্যাপাসিটর (Polarized Capacitor)
- নন-পোলারাইজড ক্যাপাসিটর (Non-Polarized Capacitor)
একটি চার্জিত ক্যাপাসিটরের সঞ্চিত এনার্জি নির্ভর করে ক্যাপাসিটরে সঞ্চিত চার্জ, ক্যাপাসিটরের দুই পাতের বিভব পার্থক্য এবং ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিটেন্সের উপর
ক্যাপাসিটর মূলত চার্জ ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ফিল্টার সার্কিটে, টিউনিং এর কাজে ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপাসিটর দুইভাবে সংযোগ দেয়া হয়:
- সিরিজ কানেকশন
- প্যারেল কানেকশন
সিরিজ কানেকশন
ক্যাপাসিটরের যে কানেকশনে প্রথম ক্যাপাসিটরের দ্বিতীয় টার্মিনালের সাথে দ্বিতীয় ক্যাপাসিটরের প্রথম টার্মিনাল , দ্বিতীয় ক্যাপাসিটরের দ্বিতীয় টার্মিনালের সাথে তৃতীয় ক্যাপাসিটরের প্রথম টার্মিনাল এবং এরুপে ক্যাপাসিটরগুলো সংযুক্ত থাকে, তা ক্যাপাসিটরের সিরিজ কানেকশন।
কোন বিদ্যুৎ উৎস থেকে যদি +Q আধান প্রথম ক্যাপাসিটরের প্রথম পাতে প্রদান করা হয় তাহলে তা অন্য পাতের ভিতরের পৃষ্ঠে -Q আধান আবিষ্ট করবে এবং +Q আধান দ্বিতীয় ক্যাপাসিটরের প্রথম পাতে প্রবাহিত হবে। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। সুতরাং প্রতিটি ক্যাপাসিটরের এক পাত +Q এবং অন্যপাত -Q আধান লাভ করে। যদি ক্যাপাসিটরেগুলোর পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য যথাক্রমে V1, V2, V3 ইত্যাদি হয়,তবে সিরিজ কানেকশনে প্রথম পাত এবং শেষ পাতের বিভব পার্থক্য হবে, $$V = V_1 +V_2 + V_3$$ যদি ক্যাপাসিটরেগুলোর ক্যাপাসিটেন্স যথাক্রমে C1, C2, C3 হয় তবে $$ \begin{align*} V_1 &=\frac{Q}{C_1}\\ V_2 &=\frac{Q}{C_2} \\ V_3 &=\frac{Q}{C_3} \\ \end{align*} $$
এখন যদি একাধিক ক্যাপাসিটরের পরিবর্তে এমন একটি ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয় যার দুই টার্মিনালের ভোল্টেজ V এবং তার চার্জ Q হয় তবে তাকে ওই ক্যাপাসিটরর ইকুভেলেন্ট ক্যাপাসিটর হবে, $$ \begin{align*} C_s &=\frac{Q}{V}\\ \text{বা, V}&=\frac{Q}{C_s} \end{align*} $$ উপরোক্ত সমীকরণগুলো থেকে পাই $$ \begin{align*} \frac{Q}{C_s} &=\frac{Q}{C_1}+\frac{Q}{C_2}+\frac{Q}{C_3}\\ \frac{1}{C_s} &=\frac{1}{C_1}+\frac{1}{C_2}+\frac{1}{C_3}\\ \end{align*} $$ তিনটি ক্যাপাসিটরের পরিবর্তে n সংখ্যক ক্যাপাসিটর থাকলে, $$ \frac{1}{C_s}=\frac {1}{C_1}+\frac {1}{C_2}+\frac {1}{C_3}………… …………+\frac {1}{C_n} $$
প্যারালাল কানেকশন
যে কানেকশনে ক্যাপাসিটরগুলোর পজেটিভ টার্মিনালগুলো এক প্রান্তে এবং ঋণাত্মক টার্মিনালগুলো অন্য একটি প্রান্তে সংযুক্ত থাকে তাকে ক্যাপাসিটরের প্যারালাল কানেকশন বলে। যেহেতু ক্যাপাসিটরের দুই টার্মিনার সোর্সের দুই টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত, সুতরাং প্রতিটি ক্যাপাসিটর একই ভোল্টেজে চার্জিত হবে। সোর্স থেকে +Q চার্জ প্রদানের ফলে যদি ক্যাপাসিটরগুলোতে চার্জের পরিমাণ যথাক্রমে Q1,Q2,Q3 হয় তবে মোট চার্জ Q হবে, $$ \begin{align*} Q &=Q_1+Q_2+Q_3\\ Q_1 &=C_1V \\ Q_2 &=C_2V\\ Q_3 &=C_3V \\ \end{align*} $$ প্যারালের ক্যাপাসিটরের সমতুল্য ক্যাপাসিটেন্স Cp হবে, $$ \begin{align*} C_p &=\frac{Q}{V}\\ \text{বা , Q} &=C_pV\\ C_pV &=C_1V+C_2V+C_3V\\ \text{বা, }C_p &= C_1+C_2+C_3 \\ \end{align*} $$ তিনটি ক্যাপাসিটরর পরিবর্তে n সংখ্যক ক্যাপাসিটর থাকলে $$ C_p=C_1+C_2+C_3+……………………………………………+C_n $$
বিভিন্ন প্রকার ক্যাপাসিটর:
![]() | সাধারণ ক্যাপাসিটর |
![]() | |
![]() | ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর |
![]() | পোলারাইজড ক্যাপাসিটর |
![]() | প্রিসেট ক্যাপাসিটর |
![]() | ভেরিয়েবল ক্যাপাসিটর |